ভুটান-চীন কূটনৈতিক চাল: হিমালয়ের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ?

webmaster

부탄과 중국의 외교 - **Prompt 1: Diplomatic Dialogue for Peace**
    "A photorealistic image depicting a focused, profess...

আরে বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট দেশ ভুটান, যাকে আমরা অনেকেই “সুখী দেশ” হিসেবে চিনি। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট্ট দেশের সাথে তার বিশাল প্রতিবেশী চীনের সম্পর্কটা কিন্তু বাইরে থেকে যতটা শান্ত আর সহজ মনে হয়, আসলে এর ভেতরে লুকিয়ে আছে বেশ জটিল এক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট?

부탄과 중국의 외교 관련 이미지 1

আমি যখন এই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে গবেষণা করছিলাম, তখন দেখলাম আসলে এর পেছনের গল্পটা কিন্তু বেশ চমকপ্রদ এবং আমাদের অনেকেরই অজানা।আমরা সবাই জানি, ভুটান আর চীনের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই, কিন্তু সীমান্ত নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা চলছে সেই ১৯৮৪ সাল থেকে!

সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যে ২৫তম সীমান্ত বৈঠক হয়ে গেল, তা কিন্তু এই আলোচনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দুই দেশ একটি “থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ” মেনে দ্রুত সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে, যা দেখে আমার মনে হচ্ছে আগামী দিনে বড় কোনো পরিবর্তন আসতে চলেছে। তবে এরই মাঝে চীনের বিতর্কিত অঞ্চলে নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা বা ভুটানের পূর্বাঞ্চলের সাকতেং নিয়েও চীনের নতুন করে দাবি তোলা – এসব বিষয় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। আমার তো মনে হয়, ভুটানকে এখন এক দারুণ অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।আর এই সবকিছুর মাঝে ভারতের কথা না বললেই নয়, কারণ ডোকলাম মালভূমি বা শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে ভারতের উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও কিন্তু এই তিন পক্ষের ভূমিকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই সম্পর্ক শুধু দুটো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, এটি পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। ভুটান কি পারবে এই জটিল পরিস্থিতি সামলে নিজের সার্বভৌমত্ব আর ঐতিহ্য রক্ষা করে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে?

তাদের সিদ্ধান্তগুলো যে শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং পুরো অঞ্চলের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে, তা ভাবলে আমি সত্যিই বিস্মিত হই। চলুন, এই আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আরও গভীরভাবে আলোচনা করা যাক। নিচে বিস্তারিতভাবে এই সম্পর্কটা নিয়ে আমরা একবারে সঠিক তথ্যগুলো জেনে নেব!

সীমান্তের জটিল ধাঁধা: ভুটান ও চীনের দীর্ঘদিনের আলোচনা

বন্ধুরা, আপনারা কি জানেন, ভুটান আর চীনের মধ্যে এই সীমান্ত নিয়ে আলোচনার ইতিহাসটা কিন্তু আজকের নয়? সেই ১৯৮৪ সাল থেকে এই দুই দেশ লাগাতার সীমান্ত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করে আসছে। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এই খবরটা পড়েছিলাম, তখন থেকেই একটা কৌতূহল ছিল – কেন এত সময় লাগছে একটা ছোট্ট দেশের সাথে একটা বিশাল দেশের সীমান্ত সমস্যা মেটাতে? বিষয়টা সত্যিই ভাবায়। এই দীর্ঘ আলোচনাগুলো অনেক সময় খুব ধীর গতিতে এগিয়েছে, কখনো কখনো মনে হয়েছে যেন থমকে আছে, আবার হঠাৎ করেই নতুন করে গতি পেয়েছে। এই আলোচনাগুলো শুধু কাগজে-কলমে বৈঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, বরং এর পেছনে লুকিয়ে আছে দুই দেশের দীর্ঘদিনের ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন এবং কৌশলগত চিন্তাভাবনা। ভুটান বরাবরই তার সার্বভৌমত্ব এবং ঐতিহ্য রক্ষায় বদ্ধপরিকর, আর চীন তার আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারে আগ্রহী – এই দুইয়ের সংঘাতই আলোচনার গতিপথকে প্রভাবিত করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এই দীর্ঘসূত্রিতা ভুটানের জন্য একদিকে যেমন চাপ তৈরি করেছে, তেমনি অন্যদিকে তাদের কূটনৈতিক ধৈর্যকেও প্রমাণ করেছে।

১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত আলোচনা

ভুটান এবং চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও, সীমান্ত নির্ধারণ নিয়ে তাদের আলোচনা ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয়। আমার মনে আছে, যখন প্রথম এই তথ্যটা জেনেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল প্রায় চার দশক ধরে চলা এই আলোচনা কতটা জটিল হতে পারে! বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন স্তরে বৈঠক হয়েছে, যেখানে দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে। এই আলোচনাগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল তাদের বিতর্কিত সীমান্ত অঞ্চলগুলোর সুনির্দিষ্ট সীমানা চিহ্নিত করা। ভুটান সবসময়ই চেয়ে এসেছে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান, যা তাদের জাতীয় স্বার্থ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে, চীনের দিক থেকে তাদের বৃহত্তর কৌশলগত স্বার্থ সবসময়ই এই আলোচনার টেবিলে প্রভাব ফেলেছে। আমার তো মনে হয়, ভুটানের মতো একটি ছোট দেশের জন্য এত দীর্ঘ সময় ধরে একটি শক্তিশালী প্রতিবেশীর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা সত্যিই এক বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি বৈঠকেই নতুন করে আশা জেগেছে, আবার কখনো কখনো হতাশাও এসেছে। কিন্তু আলোচনার প্রক্রিয়া থেমে থাকেনি, যা ভুটানের দৃঢ়তারই পরিচয় দেয়।

সাম্প্রতিক ২৫তম বৈঠক এবং ‘থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ’

সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের অক্টোবরে যে ২৫তম সীমান্ত বৈঠক হয়ে গেল, তা কিন্তু এই আলোচনায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই বৈঠকটি আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, কারণ এখানে দুই দেশ একটি “থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ” মেনে দ্রুত সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটছে। এই রোডম্যাপের কথা শুনে আমার মনে একটা আশার আলো জ্বলে উঠেছে যে হয়তো এবার সত্যিই একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান আসবে। এই রোডম্যাপে ধাপে ধাপে সমস্যা সমাধানের একটি প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগে কখনো এত স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি। প্রথম ধাপে সীমান্তের নীতিগত কাঠামো নিয়ে আলোচনা, দ্বিতীয় ধাপে সরেজমিনে যৌথ জরিপ এবং তৃতীয় ধাপে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর। আমার ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণ হলো, এই পদক্ষেপগুলো একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দেয় যে উভয় পক্ষই এখন একটি স্থিতিশীল সমাধান চায়। তবে, এই রোডম্যাপ কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলবে। কিন্তু এর বাস্তবায়ন ভুটানের জন্য যে এক বিশাল কূটনৈতিক সাফল্য হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি অধীর আগ্রহে এর ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করছি।

চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতি: ভুটানের সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ

আমার মনে হয়, ভুটান-চীন সম্পর্কের সবচেয়ে জটিল দিকটা হলো চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতি। আপনারা হয়তো দেখেছেন, ইদানীং চীন বিতর্কিত অঞ্চলে নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করছে, যা ভুটানের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি যখন এই খবরগুলো পড়ি, তখন সত্যিই খুব চিন্তিত হয়ে পড়ি ভুটানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। একটা সার্বভৌম দেশের সীমানায় অন্য দেশের এমন কার্যকলাপ, তা যতই ‘বিতর্কিত’ অঞ্চল হোক না কেন, মেনে নেওয়াটা খুব কঠিন। এই গ্রামগুলো তৈরি করার পেছনে চীনের উদ্দেশ্য কী? শুধুই কি জনসংখ্যা বাড়ানো, নাকি কৌশলগত অবস্থান আরও মজবুত করা? আমার তো মনে হয়, এটা চীনের এক ধরনের ‘স্লাইসড সালামি ট্যাকটিক্স’ – ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজেদের প্রভাব বাড়ানো। ভুটানের জন্য এটা কেবল সীমান্ত সমস্যা নয়, তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। তারা তাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সার্বভৌমত্ব নিয়ে কতটা সংবেদনশীল, তা আমরা সবাই জানি। এই ধরনের কার্যকলাপ ভুটানের জন্য নিঃসন্দেহে এক বড় চাপ সৃষ্টি করে এবং তাদের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও কঠিন করে তোলে।

বিতর্কিত অঞ্চলে চীনের নতুন গ্রাম নির্মাণ

চীনের বিতর্কিত অঞ্চলে নতুন নতুন গ্রাম তৈরি করা ভুটানের জন্য এক বড় উদ্বেগের কারণ। আমার তো মনে হয়, যখন ভুটান একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাঁটতে চাইছে, তখন চীনের এই ধরনের পদক্ষেপগুলো আলোচনা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলছে। যেমন, ভুটানের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে কিছু বিতর্কিত এলাকায় চীনের এই ধরনের গ্রাম তৈরির খবর আমরা শুনেছি। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যখন কোনো শক্তিশালী দেশ ছোট প্রতিবেশীর সীমানায় এমন কিছু করে, তখন সেই ছোট দেশের মানুষের মনে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়। এই গ্রামগুলো কেবল বসতি নয়, এগুলোর সামরিক গুরুত্বও রয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। ভুটানের জন্য এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়াটা সত্যিই এক কঠিন কাজ। একদিকে তাদের চীনের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে হচ্ছে। এই ধরনের কার্যকলাপ ভুটানের উপর চাপ সৃষ্টি করে, যাতে তারা সীমান্ত চুক্তিতে চীনের অনুকূলে ছাড় দিতে বাধ্য হয়। আমার মনে হয়, ভুটানকে এই বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে মোকাবিলা করতে হবে, যাতে তাদের জাতীয় স্বার্থ কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে নতুন দাবি

ভুটানের পূর্বাঞ্চলের সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে চীনের নতুন করে দাবি তোলাটাও আমার কাছে খুব অবাক করার মতো ঘটনা মনে হয়েছে। আপনারা জানেন, সাকতেং ভুটানের সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি যখন এই দাবি সম্পর্কে প্রথম শুনেছিলাম, তখন মনে হয়েছিল, কেন চীন এমন একটি জায়গায় দাবি করবে যেখানে ঐতিহাসিকভাবে ভুটানের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে? আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এটা কেবল ভূখণ্ডের দাবি নয়, বরং ভুটানের উপর আরও চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল। সাকতেং হিমালয়ের এক অনন্য প্রাকৃতিক অঞ্চল, যেখানে তশিকাং জেলার মেটাক ও সাকতেং ভ্যালির কাছাকাছি এলাকায় একটি ছোট সম্প্রদায় বাস করে। ঐতিহ্যগতভাবে ভুটানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে পরিচিত এই অভয়ারণ্য নিয়ে চীনের দাবি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনা তৈরি করেছে। এই ধরনের অপ্রত্যাশিত দাবিগুলো ভুটানকে আরও কঠিন অবস্থানে ফেলে দেয়, কারণ তাদের কেবল পরিচিত সীমান্ত সমস্যা নয়, বরং নতুন নতুন দাবি নিয়েও মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমার মতে, এই ঘটনা ভুটানের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত এবং তাদের প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজন মনে করিয়ে দেয়।

Advertisement

ভারতের উদ্বেগ ও ডোকলামের ছায়া: আঞ্চলিক ভারসাম্যের প্রশ্ন

যখন ভুটান-চীন সম্পর্কের কথা বলি, তখন ভারতের কথা না বললেই নয়, কারণ ডোকলাম মালভূমি বা শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে ভারতের উদ্বেগ খুবই স্বাভাবিক। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই পুরো বিষয়টা শুধু ভুটান আর চীনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, এর সাথে ভারতের কৌশলগত স্বার্থ গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। আমি যখন ডোকলাম সংকট নিয়ে প্রথম পড়াশোনা করেছিলাম, তখন বুঝেছিলাম কেন ভারত এই অঞ্চলে এত বেশি নজর দেয়। শিলিগুড়ি করিডোর, যা ‘চিকেন’স নেক’ নামেও পরিচিত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করে। এই করিডোরের নিরাপত্তাই ভারতের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভুটান চীনের কাছাকাছি চলে গেলে এই করিডোরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে, যা ভারতের জন্য এক বিশাল কৌশলগত ঝুঁকি। আমার তো মনে হয়, ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর কথাতেও কিন্তু এই তিন পক্ষের ভূমিকার ইঙ্গিত পাওয়া যায়, যা এই সম্পর্কের জটিলতাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এই পুরো অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানের যেকোনো সিদ্ধান্ত ভারতের নিরাপত্তার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।

শিলিগুড়ি করিডোর এবং ভারতের কৌশলগত স্বার্থ

শিলিগুড়ি করিডোর, যাকে আমরা ‘চিকেন’স নেক’ বলি, ভারতের জন্য এক কৌশলগত জীবনরেখা। আমার মনে আছে, প্রথম যখন এই করিডোরের গুরুত্ব সম্পর্কে জেনেছিলাম, তখন এর ভৌগোলিক অবস্থান কতটা সংবেদনশীল তা দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া এই সংকীর্ণ ভূমি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে যুক্ত করে। যদি কোনো কারণে এই করিডোর অরক্ষিত হয়ে পড়ে, তাহলে ভারতের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে। এই কারণে, ভুটান সীমান্তে চীনের কোনো রকম প্রভাব বিস্তার বা সামরিক উপস্থিতি ভারতের জন্য সরাসরি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ভুটান যদি চীনের দিকে বেশি ঝুঁকে যায় বা সীমান্ত চুক্তিতে এমন কোনো ছাড় দেয় যা চীনের কৌশলগত অবস্থানকে শক্তিশালী করে, তাহলে তা শিলিগুড়ি করিডোরের নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে। ভারত সবসময়ই চেয়েছে ভুটান যেন তার কৌশলগত অবস্থান বজায় রাখে এবং চীনের প্রভাব থেকে দূরে থাকে। এই করিডোর ভারতের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত।

ডোকলাম মালভূমির গুরুত্ব

ডোকলাম মালভূমি! এই নামটা শুনলেই আমার মনে ২০১৯ সালের সেই উত্তপ্ত পরিস্থিতির কথা ভেসে ওঠে। ভুটান, ভারত এবং চীনের সীমান্ত সংযোগস্থলে অবস্থিত এই মালভূমি আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। আমার তো মনে হয়, ডোকলাম বিতর্ক শুধু একটি ভূখণ্ডগত বিরোধ ছিল না, এটি ছিল আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। এই মালভূমিটি ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছে অবস্থিত হওয়ায় এর কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। চীন যদি ডোকলামে তার উপস্থিতি আরও বাড়াতে পারে, তাহলে তারা সহজেই শিলিগুড়ি করিডোরের উপর নজরদারি চালাতে পারবে এবং প্রয়োজনে সেটি বিচ্ছিন্ন করার হুমকিও দিতে পারবে। ভুটান এই মালভূমিকে নিজেদের অংশ মনে করে এবং ভারতের সাথে তাদের একটি অলিখিত বোঝাপড়া আছে যে ডোকলামে স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ডোকলামের মতো স্পর্শকাতর এলাকার নিয়ন্ত্রণ ভুটান বা ভারত কেউই চীনের হাতে তুলে দিতে চাইবে না। এই মালভূমিটি আঞ্চলিক ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর ভবিষ্যৎ এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভুটানের কূটনৈতিক কৌশল: এক কঠিন পরীক্ষার মুখে

আমার মনে হয়, ভুটান এখন এক দারুণ অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারত আর চীনের মতো দুই পরাশক্তির মাঝখানে দাঁড়িয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব আর ঐতিহ্য রক্ষা করাটা যে কতটা কঠিন, তা আমরা বাইরে থেকে পুরোপুরি বুঝতে পারি না। আমি যখন ভুটানের এই পরিস্থিতি নিয়ে ভাবি, তখন তাদের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা দেখে অবাক হই। একটা ছোট্ট দেশ হয়েও তারা কীভাবে এত বড় দুই দেশের সাথে ভারসাম্য বজায় রেখে চলছে, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। ভুটানকে একাধারে চীনের সম্প্রসারণবাদী আকাঙ্ক্ষা এবং ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগ – এই দুইয়ের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখতে হচ্ছে। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিতে হয়, কারণ একটি ভুল সিদ্ধান্ত পুরো অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে বদলে দিতে পারে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ভুটানকে এখন এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে হবে যা শুধু তাদের বর্তমানকেই নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করবে। এই সময়টা তাদের জন্য খুবই সংবেদনশীল এবং চ্যালেঞ্জিং।

ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা

ভুটানের কূটনৈতিক কৌশলের সবচেয়ে বড় অংশ হলো ভারত ও চীনের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখা। আমি যখন ভুটানের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে পড়াশোনা করি, তখন দেখি তারা কীভাবে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে উভয় দেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করছে। একদিকে ভারতের সাথে তাদের ঐতিহ্যবাহী এবং ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, অন্যদিকে চীনের সাথে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনা। আমার তো মনে হয়, এটা একটা দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার মতো কঠিন কাজ, যেখানে সামান্য ভুলও বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। ভুটান জানে যে তারা কোনো একটি পক্ষকে পুরোপুরি ত্যাগ করতে পারবে না, কারণ উভয়েরই তাদের উপর কৌশলগত প্রভাব রয়েছে। তারা সবসময়ই চেয়ে এসেছে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে এবং কোনো পরাশক্তির প্রভাবের অধীন হতে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই ভারসাম্য রক্ষা করাটা কেবল তাদের কূটনীতিকদের দক্ষতা নয়, বরং তাদের জাতীয় চেতনারও প্রতিফলন। তারা শান্তিপ্রিয় জাতি, কিন্তু নিজেদের অধিকার রক্ষায় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

ক্ষুদ্র দেশের টিকে থাকার সংগ্রাম

ভুটানের এই পথচলাটা আমার কাছে একটি ক্ষুদ্র দেশের টিকে থাকার সংগ্রামের প্রতীক মনে হয়। আপনারা ভেবে দেখুন, মাত্র আট লক্ষ জনসংখ্যার একটি দেশ, যার তিনদিকে ভারত এবং একদিকে চীন – এমন ভৌগোলিক অবস্থানে দাঁড়িয়ে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা কতটা কঠিন হতে পারে! আমি যখন ভুটানের ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করছিলাম, তখন তাদের এই টিকে থাকার গল্প আমাকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তারা সামরিক শক্তি দিয়ে নয়, বরং তাদের সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিকতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতির মাধ্যমে নিজেদের রক্ষা করে চলেছে। কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই নীতি বজায় রাখাটা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তই তাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমার তো মনে হয়, ভুটানের এই সংগ্রাম কেবল তাদের নিজস্ব নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশের জন্যও একটি শিক্ষণীয় বিষয়। তারা কীভাবে নিজেদের ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে সামনে এগিয়ে যাবে, সেটাই দেখার বিষয়। আমি তাদের জন্য সত্যিই শুভকামনা জানাই।

Advertisement

অর্থনৈতিক প্রভাব এবং ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

ভুটান-চীন সীমান্ত সমস্যার সমাধানের একটি বড় প্রভাব পড়বে ভুটানের অর্থনীতিতে। আমি যখন এই বিষয়টা নিয়ে ভাবি, তখন দেখতে পাই এর বহুবিধ দিক রয়েছে। সীমান্ত স্থিতিশীল হলে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে, যা ভুটানের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে। আবার অন্যদিকে, যদি সমাধান তাদের অনুকূলে না যায়, তাহলে অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হতে পারে। ভুটান একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং পর্যটন তাদের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যদি সীমান্ত সুরক্ষা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে পর্যটন শিল্প আরও বিকশিত হতে পারে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, একটি শান্তিপূর্ণ এবং স্থিতিশীল সীমান্ত ভুটানের জন্য শুধু নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও পথ খুলে দেবে। এর ফলে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হতে পারে এবং আঞ্চলিক সংযোগও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, এই সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোর পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোও মাথায় রাখতে হবে।

ভুটানের অর্থনীতিতে সীমান্ত সমাধানের প্রভাব

ভুটানের অর্থনীতিতে সীমান্ত সমাধানের প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে, তা আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, যদি একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য সীমান্ত চুক্তি হয়, তাহলে তা ভুটানের জন্য নতুন অর্থনৈতিক সুযোগ নিয়ে আসবে। সীমান্ত বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে, যা ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারে সাহায্য করবে। চীনের সাথে সরাসরি ভূমিপথের সংযোগ স্থাপিত হলে চীনা পর্যটকদের আগমণ বাড়বে, যা ভুটানের পর্যটন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করবে। এছাড়া, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হতে পারে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু, যদি সমাধান ভুটানের অনুকূলে না হয় বা চীনের প্রভাব অনেক বেশি বেড়ে যায়, তাহলে ভুটানকে অর্থনৈতিকভাবেও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতে পারে। আমার তো মনে হয়, ভুটানের সরকার এই অর্থনৈতিক দিকগুলো অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে, যাতে সীমান্ত চুক্তি তাদের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে। এই ভারসাম্য রক্ষা করাটা তাদের জন্য এক বিশাল পরীক্ষা।

দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য পদক্ষেপ

ভুটানের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য এখন থেকেই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। আমার মতে, কেবল সীমান্ত সমস্যা সমাধান করলেই হবে না, বরং এর পরবর্তীতে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা। আমি যখন বিভিন্ন দেশের ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তখন দেখি যে ক্ষুদ্র দেশগুলোর জন্য নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটা কতটা কঠিন। ভুটানকে তার সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং পরিবেশগত মূল্যবোধ বজায় রেখে উন্নয়নের পথে হাঁটতে হবে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুটানের উচিত তাদের নিজস্ব শক্তি এবং সম্পদকে কাজে লাগিয়ে এমন একটি পথ তৈরি করা, যা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ দেশ উপহার দেবে। এই পথচলাটা সহজ হবে না, কিন্তু দৃঢ় সংকল্প থাকলে সবই সম্ভব।

ভুটান ও চীনের সীমান্ত আলোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক

부탄과 중국의 외교 관련 이미지 2

চলুন, ভুটান ও চীনের সীমান্ত আলোচনার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো এক নজরে দেখে নিই। এই আলোচনাগুলো কতটা দীর্ঘ এবং জটিল ছিল, তা আপনারা এই তথ্যের মাধ্যমে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারবেন। আমি যখন এই ডেটাগুলো সংগ্রহ করছিলাম, তখন ভুটানের কূটনৈতিক ধৈর্য দেখে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। একটা দেশের জন্য এত বছর ধরে একটি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা সহজ কথা নয়। এই তথ্যগুলো থেকে আপনারা আলোচনার মূল বিষয়বস্তু এবং সেগুলোর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা পাবেন। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই ধরনের ঐতিহাসিক তথ্যগুলো আমাদেরকে বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে এবং ভবিষ্যতের সম্ভাব্য পথ অনুমান করতে সাহায্য করে।

সাল গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা / তাৎপর্য
১৯৮৪ ভুটান ও চীনের মধ্যে প্রথম সরাসরি সীমান্ত আলোচনা শুরু হয়।
১৯৮৪-২০০৪ সীমান্ত সমস্যার সমাধানে নিয়মিত বৈঠক ও আলোচনা চলতে থাকে।
১৯৯৮ ভুটান ও চীন সীমান্ত এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তিতে দুই দেশ একে অপরের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করবে না বলে সম্মত হয়।
২০০৪ ২৩তম সীমান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৭ ডোকলাম মালভূমি নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, যেখানে ভুটানের সীমান্তও জড়িত ছিল। এটি ভুটান-চীন সীমান্ত আলোচনায় একটি বড় প্রভাব ফেলে।
২০২১ চীন বিতর্কিত ভুটানি ভূখণ্ডে নতুন গ্রাম তৈরি করছে বলে খবর প্রকাশিত হয়, যা ভুটানের সার্বভৌমত্বের উপর প্রশ্ন তোলে।
২০২৩ (অক্টোবর) ২৫তম সীমান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় এবং দুই দেশ একটি “থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ” মেনে দ্রুত সীমান্ত সমস্যা সমাধানের পথে হাঁটতে সম্মত হয়।
Advertisement

আমার ব্যক্তিগত ভাবনা: ভুটানের এই পথচলা কেমন হবে?

আরে বন্ধুরা, এই সব আলোচনা শুনে আপনাদের মনে কি প্রশ্ন জাগছে না যে ভুটানের এই পথচলাটা আসলে কেমন হতে চলেছে? আমার মনে তো অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট দেশটি কি পারবে নিজেদের সার্বভৌমত্ব আর ঐতিহ্য রক্ষা করে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করতে? তাদের সিদ্ধান্তগুলো যে শুধু তাদের জন্যই নয়, বরং পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে, তা ভাবলে আমি সত্যিই বিস্মিত হই। আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি, ভুটানের মতো একটি শান্তিপূর্ণ দেশ, যেখানে সুখকে জাতীয় অগ্রগতির মাপকাঠি হিসেবে দেখা হয়, তাদের পক্ষে একটি মানবিক সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ভূ-রাজনীতির মাঠটা সবসময় সরলরেখায় চলে না। আমার তো মনে হয়, ভুটানকে এখন এক দারুণ কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দৃঢ়তার পরিচয় দিতে হবে। তাদের এই যাত্রাপথে অনেক বাধা আসবে, কিন্তু তাদের অদম্য চেতনা আর শান্তির প্রতি অঙ্গীকারই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভুটানের ভূমিকা

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভুটানের ভূমিকা আমার কাছে এক অসাধারণ কৌতূহলের বিষয়। আপনারা ভাবুন তো, ভারত আর চীনের মতো দুই পরাশক্তির মাঝখানে একটি বাফার স্টেট হিসেবে ভুটান কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে! আমি যখন আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে বিশ্লেষণ করি, তখন দেখতে পাই যে ভুটানের স্থিতিশীলতা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কতটা জরুরি। তাদের যেকোনো একদিকে বেশি ঝুঁকে যাওয়াটা আঞ্চলিক ভারসাম্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ভুটানের অবস্থান এমন যে তারা নিজেদের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা বজায় রেখে এই অঞ্চলের শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক গুরুত্বপূর্ণ সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ভুটানের উচিত তাদের এই কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নিজেদের আরও বেশি তুলে ধরা এবং সমর্থন আদায় করা। তাদের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ এর দর্শন বিশ্বকে একটি নতুন পথ দেখাতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে ভুটানের সিদ্ধান্তগুলো শুধু তাদের নিজেদের জন্য নয়, বরং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্যও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

শান্তি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার চ্যালেঞ্জ

ভুটানের জন্য শান্তি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাটা যে কতটা বড় চ্যালেঞ্জ, তা আমার মনে বারবার উঁকি দেয়। আমার মনে আছে, যখন ছোটবেলায় ভুটানের গল্প শুনতাম, তখন মনে হতো যেন এক রূপকথার দেশ, যেখানে সবাই শান্তিতে থাকে। কিন্তু এখনকার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের সেই শান্তির উপর বড়সড় চাপ সৃষ্টি করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য ভুটানকে কেবল কূটনৈতিক প্রজ্ঞাই নয়, বরং নিজেদের মানুষের ঐক্য এবং জাতীয় সংহতিকেও কাজে লাগাতে হবে। শান্তিপ্রিয় দেশ হওয়া সত্ত্বেও তাদের নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকতে হবে এবং প্রয়োজনে আত্মরক্ষার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এটা তাদের জন্য এক কঠিন পরীক্ষা, যেখানে তাদের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধ এবং আধুনিক বিশ্বের বাস্তবতার মধ্যে একটি ভারসাম্য খুঁজে বের করতে হবে। আমার তো মনে হয়, ভুটানের এই সংগ্রাম কেবল তাদের নিজস্ব নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশের জন্যও একটি শিক্ষণীয় বিষয় যে কীভাবে একটি শক্তিশালী প্রতিবেশীর মাঝে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে টিকে থাকতে হয়।

글을 마치며

বন্ধুরা, ভুটান আর চীনের এই দীর্ঘদিনের সীমান্ত আলোচনা নিয়ে এতক্ষণ আমরা অনেক কিছু জানলাম। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই পুরো বিষয়টা ভুটানের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ, যেখানে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব আর আঞ্চলিক শান্তি দুটোই জড়িয়ে আছে। একটি ছোট দেশ হয়েও ভুটান যেভাবে ধৈর্য এবং প্রজ্ঞার সাথে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে চলেছে, তা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। আমি ভীষণভাবে আশাবাদী যে, আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান আসবে, যা ভুটানের সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ণ রাখবে এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে। এই পথচলা হয়তো সহজ নয়, কিন্তু শান্তির প্রতি ভুটানের অঙ্গীকার তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।

Advertisement

알아두면 쓸모 있는 정보

১. ভুটান ও চীনের সীমান্ত আলোচনা ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে, যা প্রায় চার দশক ধরে চলছে।

২. ২০২৩ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত ২৫তম বৈঠকে ‘থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ’ গৃহীত হয়েছে, যা দ্রুত সমাধানের পথ দেখাচ্ছে।

৩. চীন বিতর্কিত ভুটানি ভূখণ্ডে নতুন গ্রাম নির্মাণ করছে, যা ভুটানের সার্বভৌমত্বের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।

৪. ভারতের শিলিগুড়ি করিডোর এবং ডোকলাম মালভূমি এই আলোচনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলোর কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে।

৫. ভুটানকে ভারত ও চীনের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রেখে নিজেদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে হচ্ছে।

중요 사항 정리

ভুটান-চীন সীমান্ত আলোচনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

আমার মনে আছে, যখন প্রথম ভুটান-চীন সীমান্ত আলোচনার ইতিহাসটা জেনেছিলাম, তখন এর দীর্ঘসূত্রিতা আমাকে অবাক করেছিল। ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয়ে এই আলোচনাগুলো প্রায় চার দশক ধরে চলছে, যেখানে দুই পক্ষই তাদের বিতর্কিত অঞ্চলগুলোর সীমানা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে। এই দীর্ঘ পথচলায় অনেক চড়াই-উতরাই এসেছে, কখনও আলোচনা ধীর গতিতে এগিয়েছে, আবার কখনও নতুন করে গতি পেয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ভুটানের মতো একটি ছোট দেশের জন্য এত দীর্ঘ সময় ধরে একটি শক্তিশালী প্রতিবেশীর সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়াটা সত্যিই তাদের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা এবং ধৈর্যের পরিচয় বহন করে। সাম্প্রতিক ২০২৩ সালের অক্টোবরে ২৫তম বৈঠক এবং ‘থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ’ গ্রহণ করাটা এই প্রক্রিয়ায় এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে। আমার বিশ্বাস, এই রোডম্যাপ যদি সফলভাবে কার্যকর হয়, তবে একটি দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সমাধানের দিকে আমরা এগোতে পারব। এই আলোচনাগুলো শুধু কাগজে-কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে দুই দেশের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য।

ভূ-রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং ভুটানের সার্বভৌমত্ব

ভুটান এখন এক দারুণ অগ্নিপরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একদিকে চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতি, বিতর্কিত অঞ্চলে নতুন গ্রাম নির্মাণ এবং সাকতেং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে নতুন দাবি – এ সবই ভুটানের সার্বভৌমত্বের উপর সরাসরি আঘাত হানছে। আমি যখন এই খবরগুলো পড়ি, তখন ভুটানের জন্য সত্যিই খুব চিন্তিত হই। একটা সার্বভৌম দেশের সীমানায় অন্য দেশের এমন কার্যকলাপ মেনে নেওয়াটা খুবই কঠিন। অন্যদিকে, ভারতের কৌশলগত উদ্বেগ, বিশেষ করে শিলিগুড়ি করিডোর এবং ডোকলাম মালভূমির নিরাপত্তা, ভুটানের জন্য আরও একটি চ্যালেঞ্জ। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ভুটানের প্রতিটি পদক্ষেপই এখন অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিতে হচ্ছে, কারণ একটি ভুল সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে সম্পূর্ণ বদলে দিতে পারে। ভুটানের মতো একটি ক্ষুদ্র দেশ হয়েও তারা যেভাবে ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে, তা তাদের অদম্য চেতনা এবং শান্তির প্রতি অঙ্গীকারের প্রতীক। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য তাদের কেবল কূটনৈতিক দক্ষতা নয়, বরং দেশের মানুষের ঐক্য এবং জাতীয় সংহতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভবিষ্যৎ পথ এবং ভুটানের কূটনৈতিক প্রজ্ঞা

ভুটানের এই পথচলাটা আমার কাছে এক অসাধারণ কৌতূহলের বিষয়। আমি বিশ্বাস করি, তাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে বর্তমানের নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্তগুলোর উপর। ভুটানকে কেবল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করলেই হবে না, বরং এর পরবর্তীতে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে। এর মধ্যে নিজেদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা, আঞ্চলিক অংশীদারদের সাথে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা এবং দেশের অভ্যন্তরে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, ভুটানের উচিত তাদের ‘গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস’ এর দর্শনকে বিশ্বের কাছে আরও বেশি তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায় করা। একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল সীমান্ত ভুটানের জন্য শুধু নিরাপত্তা নয়, বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিরও পথ খুলে দেবে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হতে পারে এবং আঞ্চলিক সংযোগও বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে, এই সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধাগুলোর পাশাপাশি ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকিগুলোও মাথায় রাখতে হবে। ভুটানের এই সংগ্রাম কেবল তাদের নিজস্ব নয়, বরং বিশ্বের অন্যান্য ক্ষুদ্র দেশের জন্যও এক শিক্ষণীয় বিষয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: ভুটান ও চীনের মধ্যে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক কেন নেই, আর এর পেছনের মূল কারণগুলো কী?

উ: আরে বন্ধুরা, এই প্রশ্নটা সত্যিই দারুণ! আমি যখন এই বিষয়টা নিয়ে প্রথম জানতে শুরু করি, তখন আমারও ঠিক এই প্রশ্নটাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। দেখুন, ভুটান এবং চীনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকার পেছনে বেশ কিছু জটিল কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কারণ হলো তাদের দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সীমান্ত বিরোধ। আমার মনে হয়, দু’দেশের মধ্যে প্রায় ৪৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, আর এর কিছু অংশ নিয়ে তাদের মধ্যে বেশ বিতর্ক আছে। এই বিতর্কগুলো এতটাই গভীর যে, এর সমাধান না হলে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করা বেশ কঠিন।এছাড়াও, ভুটান সবসময়ই ভারতের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। ঐতিহাসিকভাবেই ভুটান তার পররাষ্ট্র নীতিতে ভারতের দিকে ঝুঁকে থাকে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, এই “ভারত-প্রথম” নীতি ভুটানের পররাষ্ট্রনীতির একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারত চায় না যে ভুটান চীনের সাথে পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করুক, বিশেষ করে যখন সীমান্ত সমস্যাগুলো অমীমাংসিত। এতে ভারতের কৌশলগত স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে, বিশেষ করে ডোকলামের মতো স্পর্শকাতর এলাকায়। তাই, ভুটান তার সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী ভারতের উদ্বেগগুলোকে সম্মান জানিয়ে চীনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকছে। আসলে, ভুটান যেন এই দুই বিশাল শক্তির মাঝখানে একটা ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে, যা আমার কাছে এক দারুণ কৌশলগত চ্যালেঞ্জ বলে মনে হয়।

প্র: ভুটান ও চীনের সীমান্ত বিরোধ সমাধানের জন্য যে “থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ” এর কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে কী এবং এর তাৎপর্য কতটা?

উ: সত্যি বলতে কী, এই “থ্রি-স্টেপ রোডম্যাপ”টা হলো ভুটান ও চীনের মধ্যে সীমান্ত সমস্যা সমাধানের একটা কাঠামোবদ্ধ প্রক্রিয়া, যা আমার কাছে বেশ আশা জাগানিয়া মনে হয়েছে। আমি যখন ২০২৩ সালের অক্টোবরে এই ২৫তম সীমান্ত বৈঠকের খবর পড়ছিলাম, তখন মনে হলো এবার হয়তো সত্যিই একটা পরিবর্তন আসতে চলেছে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, এই রোডম্যাপের তিনটে প্রধান ধাপ আছে।প্রথম ধাপে, দু’দেশ সীমান্ত বিরোধের মূলনীতিগুলো নিয়ে আলোচনা করবে এবং একটি সাধারণ বোঝাপড়ায় পৌঁছাবে। এটা অনেকটা একটা রোডম্যাপ তৈরির প্রথম ধাপের মতো, যেখানে আমরা ঠিক করি কোন পথে যাব। দ্বিতীয় ধাপে, সেই নীতিগুলোর ভিত্তিতে বিতর্কিত সীমান্তগুলোর বাস্তব চিত্র অনুযায়ী একটি সুস্পষ্ট রেখাচিত্র বা ডিমার্কেশন তৈরি করা হবে। এটা আমার কাছে মনে হয় যেন দু’দেশের মধ্যে একটা পরিষ্কার দেয়াল তৈরি করার মতো। আর তৃতীয় ধাপ হলো, এই সবকিছুকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি চুক্তির মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া। এর মানে হলো, একবার চুক্তি হয়ে গেলে দু’দেশই এই সীমানাকে মেনে নেবে এবং ভবিষ্যতে আর কোনো বিতর্ক থাকবে না।এই রোডম্যাপের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো, এটি ভুটান ও চীনকে বছরের পর বছর ধরে চলা আলোচনার একটা সুনির্দিষ্ট পথ দেখাচ্ছে। এতদিন আলোচনা চললেও একটা সুস্পষ্ট কাঠামো ছিল না। এখন একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে গেলে দ্রুত সমাধানের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আমার তো মনে হয়, যদি এই রোডম্যাপ সফল হয়, তবে শুধু ভুটান-চীনের সম্পর্ক নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতেও একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে চীনের বিতর্কিত অঞ্চলে নতুন করে গ্রাম তৈরি বা সাকতেং-এর মতো পূর্বাঞ্চলে নতুন দাবি তোলার মতো ঘটনাগুলো এই প্রক্রিয়াকে কতটা সহজ করবে, তা নিয়ে আমি কিন্তু একটু চিন্তিত।

প্র: ডোকলাম মালভূমি এবং সাকতেং নিয়ে চীনের নতুন করে দাবিগুলো ভারতের জন্য কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পেছনে ভারতের মূল উদ্বেগগুলো কী?

উ: বন্ধুরা, এই প্রশ্নটা কিন্তু সত্যিই এই পুরো আলোচনার সবচেয়ে সংবেদনশীল দিক। আমার মনে হয়, ডোকলাম মালভূমি এবং সাকতেং-এর মতো এলাকাগুলো নিয়ে চীনের দাবিগুলো কেবল ভুটানের জন্য নয়, ভারতের জন্যও মারাত্মক কৌশলগত গুরুত্ব বহন করে। যখন আমি এই বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করছিলাম, তখন ভারতের ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগগুলো আমার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।ডোকলাম মালভূমি ভারতের জন্য “চিকেনস নেক” নামে পরিচিত শিলিগুড়ি করিডোরের খুব কাছে অবস্থিত। শিলিগুড়ি করিডোর হলো ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সাথে মূল ভূখণ্ডের একমাত্র সংযোগস্থল। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, যদি চীন ডোকলামে তার সামরিক উপস্থিতি বাড়াতে পারে, তাহলে তারা সহজেই এই সংকীর্ণ করিডোরকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে পারবে, যা ভারতের জন্য এক বিরাট নিরাপত্তা হুমকি। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর নিরাপত্তা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা তখন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। ভারতের কাছে এটা একটা জীবন-মরণের প্রশ্ন, কারণ এই করিডোরের উপরই পুরো উত্তর-পূর্ব ভারতের সরবরাহ এবং সৈন্য চলাচলের বিষয়গুলো নির্ভরশীল।আর সাকতেং হলো ভুটানের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। চীন যখন এই অঞ্চলে নতুন করে দাবি তোলে, তখন ভারতের জন্য আরেকটা বড় দুশ্চিন্তার কারণ তৈরি হয়। সাকতেং ভারতের অরুণাচল প্রদেশের খুব কাছাকাছি অবস্থিত। আমার কাছে মনে হয়, চীন যদি সাকতেং-এ প্রবেশাধিকার পায় বা সেখানে তার উপস্থিতি বাড়ায়, তাহলে তারা অরুণাচল প্রদেশের সংবেদনশীল সীমান্ত এলাকায় ভারতের সামরিক অবস্থানকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। এতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আসলে, ভুটানের এই ছোট ছোট ভূখণ্ডগুলো ভারতের কাছে তার জাতীয় নিরাপত্তার বিশাল এক অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই, চীন যখনই এই অঞ্চলগুলো নিয়ে নতুন করে দাবি তোলে, তখন ভারতের উদ্বেগগুলো অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং গভীর হয়। আমার তো মনে হয়, এই পরিস্থিতি ভুটান, ভারত এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কের এক জটিল টানাপোড়েন তৈরি করছে।

📚 তথ্যসূত্র

Advertisement